Forgiveness and Grace – ক্ষমা ও অনুগ্রহ
(অশান্ত ঝড় অনড় ঈমান পুস্তকের আলোকে)
-রেভাঃ আবদুল মাবুদ চৌধুরী

কারণ তোমরা যদি অন্যদরে দোষ ক্ষমা কর তবে তোমাদের বেহেস্তী পিতা তোমাদেরও ক্ষমা করবেন। কিন্তু তোমরা যদি অন্যদের দোষ ক্ষমা না কর তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও ক্ষমা করবেন না। -মথি ৬ : ১৪ – ১৫
গ্রেহাম স্টেইনস একজন অষ্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিষ্ট মিশনারী। তার বয়স ছিল ৫৮ বছর। তিনি ৩৪ বছর যাবত কুষ্ঠি রোগীদের সেবা করে আসছিলেন। ২৩শে জানুয়ারী ১৯৯৯ সালে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে দুটি ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এই সময়ে একটি হিন্দু মৌলবাদী দলের সদস্যরা গাড়ীতে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারল।
তার বিধবা পত্নি গ্লাডিস স্টেইনস ভারতের টেলিভিশনে তার স্বামী ও পুত্রদের হত্যাকারীদের ঈসা মসিহের নামে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যা ভারতের কোটি কোটি দর্শক শুনেছিল। এই ঘটনার ভারতের একজন প্রচারক বলেছিলেন, “অনেক বছর ধরে মিশনারিরা ভারতে যে কাজ করেছে তারচেয়েও বেশি কার্যকরীভাবে সুখবরের পক্ষে সাক্ষ্যবহন করেছে এই ঘটনাটি।”
কেমন করে স্বতঃস্ফুর্তভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের তিনি ক্ষমা করতে পেরেছিলেন সে সম্বন্ধে মিসেস গ্রেহামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “আমার অন্তর থেকে হত্যাকারীদের প্রতি তিক্ততা দূর করার জন্য আমি একাজ করেছি নতুবা এই ঘটনাটি বারবার আমার মনে পড়ত এবং শক্রদের প্রতি ঘৃণা জন্মাত।” এই ঘটনার পর থেকে অনেকে তার বাড়িতে এসে জানতে চাইত যে কিভাবে ঈসায়ী হওয়া যায়।

ক) ক্ষমার সংজ্ঞা :
ক্ষমা করা এমন একটি শক্তিশালী কাজ যা ঈসায়ীরা করতে পারে। সক্ষমতা বা যুক্তিতর্কের কোন বিষয় এই ক্ষমা শব্দটির মধ্যে নেই। প্রতিহিংসার এই পৃথিবীতে ক্ষমা শব্দটি যেন অস্বাভাবিক একটি শব্দ।
একজন এশিয়ান ঈসায়ী, ঈসায়ী ধর্মের পক্ষে বলতে গিয়ে বলেছেন, “যদি কেউ আামকে প্রশ্ন করে অন্য ধর্ম থেকে ঈসায়ী ধর্মের পার্থক্য কোথায়, সব ধর্মের শেষে তো একই বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। তাহলে সর্বপ্রথম আমি যে কথাটি বলব তা হল, এই শব্দ দিয়েই এই পার্থক্য করা যায়। সেই অপূর্ব শব্দটি হল ‘ক্ষমা’।
হযরত ঈসার ক্ষমা : (লুক ২৩:৩৪) পিতঃ ইহাদের . . . . । ক্ষমা চাইবার আগে ক্ষমা করতে হবে। যে সৈনিকেরা ও ইহুদীরা ঈসাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল তারা ক্ষমা চায় নি কিন্তু ঈসা বুঝতে পেরেছিলেন তাদের ক্ষমা লাভের প্রয়োজন আছে।
পাক রূহের শক্তি ছাড়া প্রকৃতভাবে ক্ষমা করা যায় না। পাক রূহের শক্তি পেলেই তা আমাদের অন্তরে খোদার ভালবাসার সৃষ্টি করে এবং ক্ষমা করতে শক্তি প্রদান করে। (মথি ৫:৪৮ ও ফিলিপীয় ৪:১৩)।
ক্ষমা বিষয়টি বুঝার জন্য কোনটি ক্ষমা নয় তা আমাদের বুঝা দরকার :
- ভুলে যাওয়া ক্ষমা নয়। মানুষ ভুলে যেতে সহজে পারে না
- ক্ষমা পুনর্মিলন নয়। এ জন্য দু’পক্ষের দরকার। অন্যায়কারী না আসলেও ক্ষতিগ্রস্ত জন ক্ষমা করে দিতে পারে
- ক্ষমা উপেক্ষা করে যাওয়া নয়। কেউ খারাপ বা ক্ষতিকারক কাজ করলে তা উপেক্ষা করে যাওয়া ক্ষমা নয়।
- ক্ষমা করা বর্জন করা নয়। গুরুত্বহীন মনে করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া নয়।
- ক্ষমা সহনশীলতার মত অস্পষ্ট ধারণা নয়। এটি দীর্ঘসূত্রিতার অভিনয়, ধামাচাপা দিয়ে রাখা
- ক্ষমা করা অপরাধী গণ্য না করা নয়। এর মাধ্যমে অপবাদ দূর করা
খ) ক্ষমার বৈশিষ্ট্য :
১. খোদা আপনাকে ক্ষমা করেছেন তাই আপনাকে ক্ষমা করতে হবে।
খোদাই একমাত্র ক্ষমা করতে পারেন . . . জবুর ১০৩:৩
হযরত ইউসুফ তাঁর ভাইদের ক্ষমা করেছিলেন।
হযরত ঈসার শিক্ষা (মথি ৫ : ৪৪) তোমরা শক্রকে মহব্বত কর এবং যারা তোমাদের অত্যাচার করে তাদের জন্য মুনাজাত কর।
হযরত পৌলের শিক্ষা (কলসিয় ৩ : ১৩)
ক্ষমা হলো ঈমানের একটি কাজ। এর মাধ্যমে আমরা খোদার হাতে সব দায়িত্ব দিয়ে দিই।
২. ক্ষমা করুন, কারণ ভবিষ্যতে আপনার ক্ষমাও এর উপর নির্ভও করবে
আমাদের শুধুমাত্র ক্ষমা করার আদেশই দেয়া হয় নি। ঈসার শিক্ষা থেকে আমরা এও জানতে পারি যে, ভবিষ্যতে আমরা ক্শা পাব কি পাব না তা নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমা করার মনোভাব ও ক্ষমার রূহ রয়েছে কি না তার উপর।
হযরত ঈসা সাহাবীদের মুনাজাত শিক্ষা দিবার পর অন্যকে ক্ষমা করার বিষযে বলেছিলেন (মথি ৬ : ১৪ – ১৫)।
হযরত ঈসা একটি গল্পের মাধ্যমে ক্ষমার বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন। এক রাজা তার দাসের কাছে ১০ হাজার মুদ্রা ঋণ পেত যা ক্ষমা করেছেন কিন্তু সেই ব্যক্তি তার পাওনাদারের ১০০ মুদ্রা ক্ষমা করেনি। মথি ১৮:৩৫
৩. ক্ষমা নিরাময় করে ও সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে ।
যারা আমাদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে তাদের অবশ্যই আমাদের ক্ষমা করতে হবে কারণ আমরা ঈসায়ী। ঈসা এই শিক্ষাই দিয়েছেন এবং এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে আমাদের সীমাবদ্ধ মানুষের ।