খোদা প্রদত্ত পরিপূর্ণ যুদ্ধ সজ্জা - Full Armor of God

-রেভাঃ আবদুল মাবুদ চৌধুরী

“তাই তোমরা যুদ্ধের জন্য খোদার দেয়া সমস্ত সাজ-পোশাক পরে নাও, যেন শয়তান যেদিন আক্রমণ করবে সেদিন তোমরা তাকে রুখে দাঁড়াতে পার এবং সব কিছু শেষ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পার।” – ইফিষীয় ৬:১৩ আয়াত

খোদার প্রত্যেক সন্তানেরা একজন সৈনিক। এটি কোন রূপক অর্থে নয় সত্যিকার অর্থে সৈনিক। তাই প্রত্যেক ঈসায়ী এক একজন সত্যিকার অর্থে সৈনিক। সাধারণ ভাবে সৈনিকগণ যখন যুদ্ধ করতে যায় তখন তাদের সামনে বাস্তবেই শক্রু রয়েছে। আর তাদেরকে সত্যিকার অর্থেই পরাজিত করতে হবে। অন্যথায় সে নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করবে।

একই ভাবে এই দেহ ও রক্ত বাস্তব? এই পৃথিবী বাস্তব? এবং শয়তান বাস্তব? যদি ঈসায়ীদের এই শক্রুরা বাস্তব হয়ে থাকে তাহলে তাদের সাথে সংঘর্ষও অবশ্যই বাস্তব।

সৈনিকেরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। প্রয়োজনীয় সাজ-পোশাক পরে নাও। আর এটি হলো বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধ। এটি কোন মিথ্যা বা মজা করার যুদ্ধ নয় – কিন্তু এটি একটি মুষ্টিযুদ্ধ (সামনা সামনি), যেখান আমাদের অনুভূতি অনুযায়ি আহত হতে পারি, রক্তক্ষরণ হতে পারে, এমনকি জীবনও চলে যেতে পারে।

কিন্তু কিভাবে আমরা আমাদের শক্রুর বিরুদ্ধে লড়ব যেন আমাদের প্রাণের মুক্তি লাভ করে সত্যিকারের বিজয়ী হতে পারব? যেহেতু আমরা দুর্বল ও প্রতিরোধ ক্ষমতায় অক্ষম, ফলে মজবুত ও ধারালো কোন একটি অস্ত্রও আমাদের নেই কারণ আমাদের পাপ। ইস্রায়েল সন্তানদের মতো- “শক্রর কাছে তারা হাসির পাত্র হয়ে উঠেছে” (হিজরত ৩২:২৫)।

 আমাদের  যদি নিজস্ব কিছু ভাল ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র না থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই পরাজিত হবো। খোদা, যিনি আমাদের শক্রর ক্ষমতা সম্পর্কে জানেন, খোদা যিনি আমাদের নিজেদের মাংসিক দুর্বলতা সম্পর্কে জানেন, তিনি আমাদের জন্য বেহেস্ত থেকে কিন্তু যুদ্ধেও সাজ-পোশাক ও অস্ত্র পাঠিয়েছেন, যেন আমরা একজন উপযুক্ত সৈনিক হয়ে শক্রর সামনে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।

 সেই কারণে সাহাবী হযরত পৌল ঈসায়ী ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে সেই বেহেস্তী অস্ত্র-শস্ত্র সম্পর্কে কিতাবের এই অংশে বর্ণনা করেছেন। তিনি এখানে কোন একটি বিশেষ অস্ত্র ব্যবহার করতে বলেন নি, কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘খোদার দেয়া সমস্ত সাজ-পোশাক’ পরিধান করতে। তিনি আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ সৈনিক হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছেন, যেন আমরা ‘শয়তানকে রুখে দাঁড়াতে পারি’।

তিনি বলেন নি যে, একবার যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে ফিওে আসলে আর প্রয়োজন সাজ-পোশাকের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘সব কিছু শেষ করে’ যেন পোশাক খুলে ফেলা না হয় বরং ‘স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার’ জন্য তা সবসময় পরিধান কওে রাখার প্রয়োজন আছে। 

এখন আমরা যুদ্ধেও সেই সব সাজ-পোশাকের বিষয়ে আলোচনা করব। সেই পোশাকের সাথে পরিচিত হব এবং তা কেমন কওে আমরা ব্যবহার করব সেই বিষয়ে উল্লেখ করব। যেহেতু কিতাবে বলা হয়েছে, যেন খোদার দেয়া সমস্ত যুদ্ধ পোশাক পরিধান করি, তার অর্থ হলো এখানে বেশ কয়েকটি অস্ত্র-শস্ত্র রয়েছে।

যদি তাই হয়, আমি একজন সৈনিক হিসেবে, কোন একটি অস্ত্র না নিয়ে যুদ্ধে যাই, তাহলে আমার পরাজিত হবার ঝুকি আছে। একই ভাবে আমি একজন ইমাম বা প্রচারক হিসেবে কিতাবের এই অংশের কোন একটি অস্ত্র এড়িয়ে যাই বা বাদ দিই তাহলে আমি অবিশ্বস্ত হবো এবং সত্যিকারের রূহানিক যুদ্ধকে অবহেলা করছি। তাই একজন ঈসায়ী এবং ইমাম বা প্রচারক হিসেবে আমাকে সবগুলো একসাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

১.  প্রথম পোশাক হলো ‘বেল্ট’। হযরত পৌল বলেছেন, ‘সত্য দিয়ে কোমর বেঁধে’ দাঁড়াতে হবে। কোমর বা শরীরের পিছনের নিম্নাংশ হলো বসার জন্য শক্তি যোগায়, সাথে সাথে তা সম্পূর্ণ শরীরকে কর্মক্ষম ও নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। যদি কোমর শক্ত না থাকে তাহলে কোন মানুষ ভারী কিছু নিতে পারবে না, পরিশ্রমের কোন কাজ করতে পারবে না। সেজন্য নাহূম নবী বলেছেন, “কোমর বেঁধে নাও, তোমার সৈন্যদল প্রস্তুত রাখ।” -নাহূম ২:১। বহেমোৎকে দেখ, “তার কোমরে কি শক্তি!” – আইয়ুব ৪০:১৬।

বেহেস্তের কোমর অস্ত্রটিকে বসার ও শক্তি রাখার জন্য পাহারা দিয়ে রাখতে হবে, কারণ শয়তান সেই জায়গায় বেশী আঘাত করতে চেষ্টা করবে। যদি শয়তান কোনভাবে আমাদের কোমর পাহারাধিন না পায় তাহলে সে পঙ্গু করে দিবে। আমাদের কোমরকে শক্ত রেখে, শক্রর কোমর ভেঙ্গে দিতে হবে। কিতাব এই কথা বলে, “তুমি তার শক্রর কোর ভেংগে দাও; যারা তাকে ঘৃণা কওে তাদেও কোমর ভেংগে দাও, যেন তারা আর দাঁড়াতে না পারে।” -দ্বিঃ বিঃ ৩৩:১১। সেজন্য পঙ্গুত্ব বরণ করার আগে আমাদেও কোমরকে শক্ত রাখার জন্য বেহেস্তী যুদ্ধাস্ত্রটি দিয়ে পাহারায় রাখতে হবে। 

 আর এই বেহেস্তী বেল্ট হলো “সত্য”। সত্য মানে কি বুঝি? আমরা মনে হয় “সত্য” বলতে এখানে দু’টি বিষয় বুঝানো হয়েছে।

প্রথমতঃ সাধারণভাবে সৎ অন্তরের ঈসায়ী; “সত্য” সম্পর্কে হযরত দাউদ বলেছেন, “অন্তরের ভিতরের অংশ” -জবুর ৫১:৬। অন্তরের সততা রক্ষা করা প্রত্যেক সত্যিকারের ঈসায়ীর মৌলিক দায়িত্ব। যদি কোন লোকের মধ্যে খোদার কালামের সত্য না থাকে তাহলে তার কিছুই নেই। আমাদের কোমরকে শক্ত ও কর্মক্ষম রাখতে হলে হযরত পৌল বলেছেন, “খোদার দেয়া পবিত্রতা এবং সরলতায়” তা করতে হবে। ২ করিন্থীয় ১:১২

যদি আমরা সততা রক্ষা না করি তাহলে শয়তানকে সুযোগ দিচ্ছি যেন সে আমার মধ্যে কাজ করে। রাজা শৌল, ইস্কিরিয়াত ইহুদা তাদেও যখন পতন হয়েছে তখন তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। তাই আমাদেও নিজেদেও রক্ষা করার জন্য একটি সত্যের কোমর বাধুনি প্রয়োজন – তাহলো খোদার কালামের প্রতি হৃদয়ে বিশ্বস্ত থাকা। পবিত্র আত্মার শিক্ষা গ্রহন কওে প্রত্যেক ঈসায়ীকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যখন আমরা পেন্ট পরি যা যেন ঢিলা হয়ে না যায় সেজন্য বেল্ট ব্যবহার করি। মাঝে মাঝে বেল্ট টেনে শক্ত কওে পরতে হয় যাতে শরীরের সাথে পেন্ট লেগে থাকে। একইভাবে অনেক সময় আমাদের পাপের কারণে সহজে আমাদের সত্যেও কোমর বন্ধনি ঢিলা হয়ে যায়। আমাদের বিশ্বাস নড়েবড়ে হয়ে যায়। কিন্তু যদি হৃদয়ের সত্যতা থাকে তাহলে তা পুনরায় ঠিক কওে নিয়ে স্থিও হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায়।

দ্বিতীয়তঃ ‘সত্য’ শব্দটি একই ভাবে আরো বাস্তবতায় এবং নির্দিষ্ট করে বলতে হলে ঈসায়ী সত্য, তাহলো ‘ঈসার মধ্যেই সেই সত্য’। একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে সৎ কিন্তু তা সত্যিই ভুল। একজন নাস্তিক সৎ হতে পারে? একজন মুসলমান সৎ হতে পারে?একজন হিন্দু সৎ হতে পারে? তাহলে তারা আসলে সৎ ও সত্যে চলছে? হ্যা, অবশ্যই, কিন্তু রূহানিকভাবে নয়, জাগতিকভাবে।

বর্তমান সময়ে অনেকে ঈমানদার হয়েছে, জামাতে যাচ্ছে, জামাতের কার্যক্রমে অংশগ্রহন করছে, কিন্তু দেখা যায়, সত্যিকার অর্থে অনেকের মাঝে ‘সত্য’ নেই। সত্য এমন বিষয়, হযরত ইউনুস নবী জাহাজের নাবিককে বললেন, আমাকে সমুদ্রে ফেলে দাও। রূহানিক সত্য হলো সর্বশক্তি দিয়ে পাপ ও শয়তানের সাথে লড়ে যাওয়া। আর ‘ঈসাতে যে সত্য’ তাছাড়া আমরা এই যুদ্ধ করতে পারি না। আমরা যারা নুতন বিশ্বাসী হয়েছি, আমরা আমাদের ঈমানের ব্যাপারে সৎ আছি, কিন্তু কিভাবে এই মহান যুদ্ধে লড়াই করতে হবে সেই বিষয়ে জানি না।

খোদার অনুগ্রহের সুসমাচারের মাধ্যমে ‘সত্য’ প্রকাশিত হয়েছে যা অবশ্যই আমাদেও রূহানিক জীবনের শক্তির ভিত্তি হতে হবে। এই সত্য ব্যতিত আমরা শয়তানের সাথে লড়তে পারব না। তাই যদি আমরা শয়তানের সাথে লড়তে চাই তাহলে সত্য নিয়েই লড়তে হবে। সুসমাচারের সত্য আমাদের হৃদয় ও মনকে পবিত্র আত্মার সাহায্যে জাগিয়ে রাখবে, তা কোমার বন্ধনি হিসেবে আমাদের শক্তি যোগাবে যেন আমরা প্রতিদিনের যুদ্ধে জয়ী হতে পারি।

২.  দ্বিতীয় পোশাক হলো ‘ধার্মিকতার বুকপাটা’। এখন আমার কোমর শক্ত ও সক্রিয় ভাবে কাজ করছে, সুতরাং বক্ষ হলো যেখানে হৃদয় থাকে, যা রক্ত সঞ্চালনের উৎস এবং ফুসফুস হলো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে। এই দু’টি জিনিষ জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একই ভাবে বেহেস্তী শ্বাস-প্রশ্বাস আমাদে নিতে হয়। তাই এই দু’টি অঙ্গকে বিশেষভাবে নিরাপদ রাখতে হবে।

রূহানিকভাবে ‘হৃদয়’ দু’টি বিষয় প্রকাশ কওে – প্রথমতঃ ভাল-মন্দ বা নৈতিক বিষয় বুঝার; এবং দ্বিতীয়তঃ মায়া-মমতা বা ভালবাসা।

জীবনের এই দু’টি জীবন্ত অঙ্গকে বিশেষ করে বেহেস্তী অস্ত্র বুকপাটা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে, যেন সেখানে শয়তান আঘাত করতে না পারে। হযরত সোলায়মান নবী বলেছেন, “সব কিছুর চেয়ে তোমার অন্তরকে বেশী কওে পাহারা দিয়ে রাখ, কারণ অন্তর থেকেই তোমার জীবনের সব কিছু বের হয়ে আসে” -মেসাল ৪:২৩।

ভাল-মন্দ নৈতিক বিষয় গুলো অন্তর থেকে আসে। আমরা নিজের শক্তিতে কাজ দ্বারা তা সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করতে পারব না। তাই আমাদের অন্তরকে বেহেস্তী অস্ত্র দিয়ে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। সেই অস্ত্র খোদা আমাদেও দিয়েছেন, তাহলো “ধার্মিকতার বুকপাটা” – আমাদের নিজেদের কোন ধার্মিকতা নয়, কিন্তু ঈসা মসীহের ধার্মিকতা আমাদের ধারণ করতে হবে।

শয়তানকে আক্রমন করতে দিন, সে তা করবে। কিন্তু সে সফল হতে পারবে না যখন আমাদের নাজাত তাকে সর্তক কওে দিবে। যখন আমি জগতের নানান দুর্যোগে চলব তখন চিন্তা করতে হবে, “আমি যাতে পড়ে যাই সেজন্য তারা আমাকে ধাক্কা মেরেছিল, কিন্তু খোদা আমাকে সাহায্য করলেন” জবুর ১১৮:১৩। শয়তান আক্রমন করতে আসবে আর সৈনিক তাকে সর্তক করে দিবে। কারণ তা লোহার তৈরী বুকপাটা যা আক্রমনকে প্রতিহত করবে।

শয়তান আপনাকে বলবে, আরে যে ঈমান তুমি এনেছ তা ঠিক হয়নি। তুমি পাপী। তোমার মন ঠিক নেই। তুমি ঈমান আনার সময়ই চাতুরতায় তা এনেছ। ঈমান আনলেও এখন তুমি ঠিক ভাবে চলতে পারছ না। এখন পারলেও পরে নানান অসুবিধা আসলে তখন স্থিও থাকতে পারবে না। তোমার এই সমস্ত ধার্মিকতা কোন কাজে আসবে না। খোদা তোমাকে ক্ষমা করবে না। আর করলেও কতবার করবে। এভাবে সে আপনাকে আক্রমন করবে। কিন্তু যদি আপনার বুকপাটাটি লোহার তৈরী না হয় তাহলে সেই তীর আপনার বুকে গেঁথে যাবে। তাই আমাদেরকে লোহার তৈরী বুকপাটা পরিধান করতে হবে। তাহলো হযরত ঈসার ধার্মিকতাকে ধারণ করা। তাকে বলতে হবে, “তাঁর পুত্র ঈসার রক্ত সমস্ত পাপ থেকে আমাদেও পাক-সাফ করে” ১ ইউহোন্না ১:৭।

আমাদেও ভালবাসা বা মায়া-মমতা। হৃদয় শুধু নৈতিকতার জন্য নয় সেখানে ভালবাসাও রয়েছে। আমরা এই পৃথিবীতে বসবাস করছি। আমাদেও স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের প্রতি আমাদেও ভালবাসা রয়েছে। এই জগতের অনেক লোভনীয় বিষয় রয়েছে যার প্রতি আমাদেও ভালবাসা জন্মায়। অনেক সময় চিন্তা করি এই একবারের জন্য সুযোগটি গ্রহন করি, পওে ভাল হয়ে যাব। এভাবে আমরা জগতের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি। হযরত দাউদ তার ছেলে অবসালোমকে ভালবাসতেন। কিন্তু তার প্রতিদান হিসেবে তাঁকে রাজ্য ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। হযরত ইলিয়াস নবী তার ছেলেদের ভালবাসত, ফলে খোদার অভিশাপ তাঁর ঘওে এসেছিল।

ফলে একসময় বেহেস্তী ভালবাসা আমাদেও থেকে চলে যায়। সেজন্য ঈসার ধার্মিকতার বুকপাটা দিয়ে হৃদয়কে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। খোদা সত্যিকারের ভালবাসা তাঁর পুত্র ঈসা মসীহের মাধ্যমে আমাদেরকে দান করেছেন।

তা আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে। একমাত্র ঈসার ভালবাসা পারে, আমাদের পবিত্র ও খাঁটি রাখতে। তাই ভগ্ন চুর্ণ হৃদয় নিয়ে তাঁর সাথে আমাদেও বসবাস করতে হবে।

একইভাবে বুকের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে তাহলো ফুসফুস। যার মাধ্যমে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিই। এটি রূহানিক অনুভূতিকে প্রকাশ করে। তাহলো-

ক) শ্বাস গ্রহন করা অর্থাৎ খোদার রূহে শ্বাস নেয়া। আমরা যা কিছু করি না কেন যেন বেহেস্তী শ্বাস গ্রহন করি। “হে বাতাস, তুমি চারিদিক থেকে এস” (ইহিস্কেল ৩৭:৯)।

খ) প্রশ্বাস ছাড়া অর্থাৎ খোদার উপস্থিতিতে এবং তাঁর পক্ষে আত্মায় বেহেস্তী আকাংখা যেন আমরা প্রশ্বাস ছাড়ি। এই শ্বাস-প্রশ্বাস অর্থাৎ ভিতরে ও বাহিওে যেন বেহেস্তী জীবন আমাদেও মধ্যে প্রবাহিত করে। তাই তাকে রক্ষা করার জন্য ধার্মিকতার বুকপাটা পরিধান করতে হবে। শয়তান সব সময় চেষ্টা করবে, যেন আমরা খোদার পক্ষে শ্বাস নিতে না পারি এবং ধন্যবাদ ও প্রশংসায় তাঁর পক্ষে  প্রশ্বাস ছাড়তে না পারি। আমাদেও নিজের ধার্মিকতা এতই দুর্বল যে, আমরা নিজেকে নিজে রক্ষা করতে পারি না। কিন্তু ঈসার ধার্মিকতা ও রক্তে তাঁরই বুকপাটা পরিধান কওে তা করতে পারি।  সুতরাং এই যুদ্ধাস্ত্র আমাদেও জীবনের জন্য খুবই প্রয়োজন।

৩.  তৃতীয় পোশাক হলো ‘পা’। এখন আমরা পায়ের দিকে যাচ্ছি। “আর শান্তির সুসংবাদ প্রচারের জন্য পা প্রস্তুত রেখে দাঁড়িয়ে থাক।” পা ও পায়ের পাতা হলো আরেকটি যুদ্ধাস্ত্র। অন্ধকারের বাদশাহ সব সময় এই দুটিকে আক্রমন করতে চেষ্টা করে। যখন আমরা হাঁটাচলা করি, তখন চলার পথে অনেক রকম অসুবিধা থাকে। যদি পায়ে জুতা পরা না থাকে তাহলে ছোট পাথরে বা কাঁটায়, পেরেকে বা গর্তে পরে পায়ের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা বেশী।

‘পায়ের পাতা’ দ্বারা রূহানিক ভাবে আমরা বুঝি যে, আমাদের হাঁটা ও আলাপ-আলোচনা করা। এটি শয়তানের বিরুদ্ধে একটি ভীতিজনক অস্ত্র। সে সব সময় আমাদের প্রত্যেকটি অঙ্গেও দিকে দৃষ্টি রাখে, কখন  আমার কোমর শক্তভাবে বাঁধা নেই, কখন আমার হৃদয় ও ফুসফুস ঢাকা নেই, একইভাবে আমাদের চলাফেরা বা কথা বলার সময়ও সে আক্রমন কওে থাকে। এটি বড় ধরণের একটি প্রলোভন। সে চায় আমাদের ‘পা’ বা ‘পায়ের পাতা’ অচল হয়ে থাকুক। আমরা ঘওে বসে থাকি। তাই এমন পাদুকা ব্যবহার করতে হবে যেন, আমাদেও পা ও পায়ের পাতা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে। সেইফটি সু আমাদের ওয়ার্কশপের কর্মচারিরা ব্যবহার করে। গ্যাস ফিল্ডে লম্বা গামবুট ব্যবহার করে। যেন হাটু পর্যন্ত পাটি নিরাপদ থাকে।

আমাদেও পায়ের নিরাপত্তার জন্য খোদা কি যোগান দিয়েছেন? যা ব্যবহার করলে শয়তান পায়ের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তাহলো ‘শান্তির সুসংবাদেও জন্য প্রস্তুত হওয়া’। এখানে একটি বিষয় বেশ লক্ষ্যণীয় তাহলো “প্রস্তুত” থাকা। এটি হলো আমাদেও হৃদয়ে ‘শান্তির সুসংবাদ’ ধারণ করা যা আমাদেও পা ও পায়ের পাতাকে মজবুত করতে সাহায্য করে। এটি কোন চামড়ার বা রেকসিনের জুতা নয়। যা হয়ত কোন কিছু লাথি দিলে বা জোওে হাঁটলে নষ্ট হয়ে যাবে। এটি হলো লোহা ও পিতল দিয়ে তৈরী জুতা, যা সহজে নষ্ট হবে না।

এটি এমন কোন বিষয় নয় যে, সিনয় পাহাড়ে হযরত মূসা যাবার সময় তার জুতা খুলে রাখতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদেও জন্য পাঠানো হয়েছে, সুসমাচার। শান্তির সুসংবাদ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখানে কোন আইন-কানুন বা শরিয়ত নিয়ে আমাদেও যুদ্ধ করতে হবে না কিন্তু আমাদেও জন্য প্রস্তুত রাখা হয়ে খোদার শান্তির সুসমাচার যা আমাদেও পা বহন কওে নিয়ে যাবে। এটি আমাদেও কোন বাধ্যতা দিয়ে, প্রচারকের বা ইমামের চাকুরি কওে তা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু এটি হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

যখন আমার নিজের হৃদয়ে সেই ‘শান্তির সুসমাচার’ গ্রহন করব, তখন তা অন্যেও কাছে পৌছে দিবার জন্য আমার পা এমনই চলতে থাকবে। শয়তান কোনভাবে আমাকে আপনাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। আমার প্রতিদিনের কাজের মধ্যে যখন সুসমাচারের জন্য হৃদয় প্রস্তুত থাকবে তখন শয়তান আমাদেও ছেড়ে চলে যাবে।

৪.  পরবর্তী পোশাক ‘ঢাল’ নিয়ে আলোচনা করার আগে আমি তারপরের বিষয়টিতে যেতে চাই। আর সেই চতুর্থ পোশাক হলো “নাজাতের শিরস্ত্রাণ”। যা আমাদেও মাথাকে ঢেকে রাখে, বলা যায় হেলমেট পরতে হবে। এই মাথাকে আমরা দুটি বিশেষ বিষয়ের পোশাক বলতে পারি।

ক) সমস্ত শক্তি, কার্যক্রম, ক্ষমতা ও চলাফেরা

খ) উপলব্ধি ও বুঝার ক্ষমতা।

শয়তানের আরেকটি চেষ্টা হলো আমাদেও মাথাকে নষ্ট কওে ফেলা। যেন তা অবশ হয়ে সমস্ত শক্তি ও চলাফেরার ক্ষমতা, এবং খোদা সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পায়। সে অনেক সময় আমাদের বুঝবার ক্ষমতায় সন্দেহ দিয়ে দেয়। আমাদেও দৃষ্টি জগতের বিভিন্ন সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।

যদি আমাদেও মাথা সুরক্ষিত না থাকে তাহলে আমরা কিভাবে অন্যের আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করব। যদি আমাদেও মাথা রক্ষিত না হয় তাহলে আমাদের মস্তিস্ক বা ব্রেইন কাজ করবে না। অনেক সময় বিভিন্ন মতবাদ শুনে দেখে আপনার মন কি প্রলোভিত হয় না? যখন কিছু লোকের বেশ মনভুলানো প্রচার বা কথা শুনি তখন কি আমাদেও মন তা  অনেকটা বিশ্বাস কওে ফেলে? এমন সময় শয়তান আপনার মধ্যে আরো বেশী কওে সন্দেহ দিয়ে দিতে চাইবে যেন আপনি খোদার থেকে দুওে সওে যান। সেরকম মূহুর্তে আমাদেও প্রয়োজন মাথাটাকে রক্ষা করা। যার জন্য দেয়া হয়েছে, ‘নাজাতের শিরস্ত্রাণ।’ ‘নাজাতের শিরস্ত্রাণ’ মাথার জন্য কেন বেশ মানান সই? কারণ নাজাতের মধ্যেই সমস্ত সত্য। একই ভাবে সমস্ত বিভ্রান্তিও এটিকে কেন্দ্র করে।

আপনি নাজাতের জন্য পথে পথে ঘুরেন। পীর, দরবেশ, মসজিদ, মন্দির, মক্কা, বিশ্ব ইজতেমা এসমস্ত জায়গায় যেতে চাইলে শয়তান আপনাকে বাধা দিবে না। কিন্তু হযরত ঈসার মাধ্যমে যে নাজাত তা নিতে চাইলেই শয়তানের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তার লক্ষ্য শুধু হযরত ঈসা। তাঁর খোদায়ীত্ব, পুত্রত্ব, তাঁর ক্রুশ, তাঁর পুনরুত্থানের ক্ষমতা, তাঁর অনুগ্রহের সত্য, তাঁর মাধ্যমে যে সম্পূর্ণ নাজাত আছে এসব শয়তানের পছন্দ নয়। তাই এই সকল বিষয়ে শয়তান আমাদেও মধ্যে সন্দেহ দিতে চায়। সেজন্য মাথাকে রক্ষা করতে যে যুদ্ধাস্ত্র আমাদেও ব্যবহার করতে হবে তাহলো ‘নাজাতের শিরস্ত্রাণ’।

৫.  পরবর্তী পোশাক হলো “ঈমানের ঢাল”। আমরা জানি এ যুদ্ধ কোন সাধারণ যুদ্ধ নয়। এটি এমন একটি যুদ্ধ সামনাসামনি, মুখোমুখি, হাতে হাত রেখে এই যুদ্ধ করতে হবে। আর তাই আমরা দেখলাম, কোমর বাঁধুনি, পা, পায়ের পাতা, বুক, মাথা এসব নিরাপদ রাখলাম। তারপরও হতে পাওে কোন না কোন ভাবে দেহের কোন অংশ অরক্ষিত রয়ে গেল। আমাদেও শক্রর বিরুদ্ধে দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করতে হবে। শক্র কোন রকম ফাঁক পেলেই সেখানে আক্রমন করবে। তাই আমাদেও রক্ষার জন্য আরো যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োজন। আর তাহলো ঢাল।

এই ঢাল হলো “ঈমানের ঢাল”। এটি আমাদেও জন্য খুবই প্রয়োজনীয় অস্ত্র। আমরা যা করি না কেন, যেখানেই যাই না কেন, যেভাবেই লড়াই করি না কেন এই যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োজন হবে। যখন আমাদেও মনের মধ্যে নূন্যতম অবিশ্বাস জন্ম নিবে অমনিই শয়তান আমাদেও আক্রমন করবে। এটি জীবনের প্রতি মূহুর্তে অধ্যবসায় করার অস্ত্র যা শয়তানকে সব সময় বাধা দিয়ে রাখবে। আমাদেও যেকোন অংশ অরক্ষিত হয়ে যেতে পাওে যে কোন সময় কিন্তু ‘ঈমানের ঢাল’ সব সময় সেই অরক্ষিত অংশটিকে রক্ষা কওে যাবে। এটি সকলের উপওে এবং সমস্ত কিছুকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র।

এই অস্ত্র যদি দুর্বল হয় তাহলে তা আমাদেরকে খোদার বিরুদ্ধে পাপ করতে কোন না কোন ভাবে প্ররোচিত করবে। যখন আমরা বিশ্বাস করি খোদার পুত্র ঈসা মসীহের মাধ্যমে নাজাত পেয়েছি, আমার নাম জীবন পুস্তকে লেখা হয়েছে, খোদা হলেন আমার পিতা, ঈসা আমার প্রভু ও ভাই, পাক-রূহ আমার বন্ধু এবং শিক্ষক – তখন শয়তান বলবে এর সবকিছু মিথ্যা। এগুলো শুধু তোমার কল্পনা। কিন্তু ‘ঈমানের ঢাল’ আমাদেরকে তখন তার এই প্ররোচনা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবে।

৬.  আর মাত্র একটি যুদ্ধ পোশাক আমাদেও পরিধান করতে হবে যা আমাদেও নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন তাহলো  ছোরা বা তলোয়ার’। এটি সব সময় ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যখন কোন বিপদে পড়ে যাই তখন খাপ থেকে এই তলোয়ার বের করতে হয়। যখন আমি নিজে আক্রান্ত হই তখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই অস্ত্রের ব্যবহার করতে হয়। শয়তানকে আমাদেও আক্রমন করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু শয়তান যখন আপনাকে আক্রমন করবে তখন তাকে প্রতিরোধ কওে নিজেকে বাঁচানোর জন্য এই অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে। এটি একটি মাত্র উপযুক্ত অস্ত্র তাহলো – “পাক-রূহের ছোরা”।

এটি একমাত্র অস্ত্র যা আমাদেও জন্য দেয়া হয়েছে যেন আমরা শয়তানকে কাবু করতে পারি। এই পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি এবং সে আমাদেও সামনে জগতের অনেক কিছু নিয়ে আসবে। আপনি বিশ্বাসে সুন্দও জীবন যাপন করছেন, সে সেখানে নানান যুক্তিতর্ক উপস্থিত করবে। আপনি তা খণ্ডন করার চেষ্টা করছেন, সে নুতন আরেক যুক্তি আপনার সামনে তুলে ধরবে। সে প্রলোভন নিয়ে আসবে, আপনি সেই প্রলোভনকে প্রতিরোধ করছেন। সে কথা বলবে, আমরা শুনব। সে নানান কথা নিয়ে আসবে, আমরা কানগুলোকে ধওে রাখব। সে খোদার নাানান ওয়াদার কথা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে আমাদেরকে জগতের নানান ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করবে।

ঐদি আমরা সেই সত্য অস্ত্রটি দ্রুত ব্যবহার করতে না পারি তাহলে সে সুযোগ নিবে। সেই অস্ত্র ‘পাক-রূহের ছোরা’ যা খোদার জীবন্ত কালাম। আমাদেও সামনে মসীহ নিজে এর ব্যবহারের উদাহরণ রেখে গেছেন। তাঁকে পরাজিত করার জন্য শয়তান তিনবার মরুভূমিতে প্রলোভন নিয়ে এসেছিল, কিন্তু ঈসা মসীহ সেই ‘পাক-রূহের ছোরা’ ব্যবহার কওে উত্তর দিয়েছিলেন, কিতাবে লেখা আছে, কিতাবে লেখা আছে, কিতাবে লেখা আছে। তিনি অন্য কোন অস্ত্র ব্যবহার করেন নি। আর এই অস্ত্রেও আঘাতেই শয়তান কাবু হয়ে গেছে এবং পালিয়ে গেছে।

পাক-রূহের ছোরা অর্থাৎ খোদার কালাম তখনই আমরা ব্যবহার করতে পারব, যখন তা আমাদেও হৃদয়ে প্রয়োগ করবো, সেখানে যা বলা হয়েছে তাতে ঈমান রাখবো। সব সময় ভাল ভাল বিষয়গুলো আমাদেও জীবনে আসবে তা নয়, অনেক সময় দুঃখ-কষ্ট, বিরক্তি, অপমান, নির্যাতনও আমাদেও সামনে আসবে। তখন আমাদেরকে সেই ছোরা বা তলোয়ার ব্যবহার করত হবে, যা হলো খোদার কালাম। হযরত দাউদ বলেছেন, তোমার কালাম আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক। এই কালাম আপনাকে সান্তনা দিবে। সত্যেও পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করবে।

 

আমরা যেন কখনও বেহেস্তী এই যুদ্ধাস্ত্র গুলোকে ত্যাগ না করি। এটি আমাদেও জন্য খোদার অনুগ্রহ। যদি আপনার এর যে কোন একটি অস্ত্র থাকে, তাহলে সকল অস্ত্রই আপনার আছে। যুদ্ধে ক্ষেত্রে লড়বার জন্য খোদা কখনও অপর্যাপ্ত অস্ত্র দান করবেন না। তিনি যিনি একটি অস্ত্র দান করবেন, তিনিই সমস্ত অস্ত্র দান করবেন।

এই বিষয় হৃদয়ে ধারণ করুন যে, খোদা আপনাকে তাঁর সৈনিক হবার জন্য আহ্বান করেছেন। তাই সাহস রেখে সমস্ত সাজ-পোশাপ পরিধান করে যুদ্ধ ক্ষেত্রে যান দেখবেন আপনি বিজয়ী হয়েছেন। কারণ আপনি হযরত ঈসার সৈনিক। তিনি ওয়াদা করেছেন, জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি আপনার আমার সাথে সাথে থাকবেন। আমেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *