হযরত ঈসা-ইনি কেমন শিশু? - Jesus-what kind of Child?

-রেভাঃ আবদুল মাবুদ চৌধুরী

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ২২: ৪২ আয়াত-তিনি কার বংশধর? তাঁরা ঈসাকে বললেন, “দাউদের বংশধর।”

ভূমিকা: “ইনি কেমন শিশু?” এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিছু লোক বলে থাকেন হযরত ঈসা হলেন দাউদ সন্তান, যা আজকের আলোচ্য বিষয়।
কিছু লোকে বলেন তিনি ইউসুফের সন্তান। এই সম্বোধনটি সঠিক নয়। কিতাবে ইউসুফ এবং মরিয়মের দৈহিক সম্পর্কের পার্থক্য বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। ইঞ্জিল শরীফ, লূক ২ : ৩৩ আয়াত-“শিমিয়োন (নবী) শিশুটির বিষয়ে যা বললেন তাতে শিশুটির মাতা-পিতা আশ্চর্য হলেন।”

ইঞ্জিল শরীফে তাঁকে সম্বোধন করা হয়েছে-

   ১) দাউদ-সন্তান
   ২) মরিয়ম-সন্তান
   ৩) মনুষ্য-সন্তান
   ৪) খোদার-সন্তান

উপরোক্ত চারটি বিষয়ে এখানে আলোচনা করতে চাই যার ভিন্নতা কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশু-ঈসা সম্পর্কে চার ধরনের দৃষ্টিকোণ বড়দিনের যে তাৎপর্য বহন করে তা যেন আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি।

১. দাউদ-সন্তান হলেন, তিনি একজন সার্বভৌম শিশু

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ১ : ১ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, “ঈসা মসীহ দাউদের বংশের এবং দাউদ ইব্রাহিমের বংশের লোক।”
লূক ১ : ৩১-৩৩ “শোনো, তুমি গর্ভবতী হবে আর তোমার একটি ছেলে হবে। তুমি তার নাম ঈসা রাখবে। তিনি মহান হবেন। তাঁকে মহান খোদার পুত্র বলা হবে। প্রভু-খোদা তাঁর পূর্ব-পুরুষ রাজা দাউদের সিংহাসন তাঁকে দিবেন। তিনি ইয়াকুবের বংশের লোকদের ওপর চিরকাল রাজত্ব করবেন। তাঁর রাজত্ব কখনও শেষ হবে না।”
উপরোক্ত আয়াতসমূহের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, হযরত ঈসা হলেন-

   ক) একজন ন্যায়সম্মত রাজা

   খ) একজন অগ্রাহ্যকারী রাজা

   গ) একজন পুনরায় আগমনকারী রাজা!

২. মরিয়মের-সন্তান হলেন, তিনি একজন অতিপ্রাকৃতিক শিশু

ইঞ্জিল শরীফ, মার্ক ৬ : ৩ আয়াত-“এ কি সেই কাঠ-মিস্ত্রি নয়? এ কি মরিয়মের ছেলে নয়? ইয়াকুব, যোষী, যিহুদা ও শিমোনের ভাই নয়? তার বোনেরা কি এখানে আমাদের মধ্যে নেই?” এভাবে ঈসাকে নিয়ে লোকদের মনে বাধা আসতে লাগল।
নবীদের কিতাব, ইশাইয় ৭ : ১৪ আয়াত-অতএব প্রভু নিজেই তোমাদের কাছে একটা চিহ্ন দেখাবেন। তা হলো, একজন অবিবাহিতা সতী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তাঁর একটি ছেলে হবে; তাঁর নাম রাখা হবে ইম্মানূয়েল (আমাদের সাথে খোদা)।
উপরোক্ত আয়াতসমূহের মাধ্যমে বুঝা যায় যে-হযরত ঈসার জন্ম

   ক) দৃশ্যত এটি একটি অসম্ভব কার্যসাধন

   খ) এটি একটি প্রশ্নাতীত প্রমাণিত সত্য

    -ইউসুফের মাধ্যমে
    -রাখালদের মাধ্যমে
    -পণ্ডিতগণের মাধ্যমে
    -হেরোদ রাজার মাধ্যমে
    -ফেরেস্তাগণের মাধ্যমে
    -শয়তানের মাধ্যমে
    -সর্বশক্তিমান খোদার মাধ্যমে
    -এই জন্ম সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

৩. মনুষ্য-সন্তান হলেন, তিনি একজন সেবাকারী শিশু

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ৯ : ৬ আয়াত-“আপনারা যেন জানতে পারেন এই পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করার ক্ষমতা মনুষ্যপুত্রের আছে” এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ-রোগীকে বললেন, “ওঠো, তোমার বিছানা তুলে নিয়ে বাড়ি যাও।”
ফিলিপীয় ২ : ৫-৮ আয়াত-মসীহ ঈসার যে মনোভাব ছিল তা যেন তোমাদের অন্তরে থাকে। স্বভাবে তিনি খোদা-ই রইলেন, কিন্তু বাইরে খোদার সমান থাকা তিনি আঁকড়ে ধরে রাখার মতো এমন কিছু মনে করেননি। তিনি বরং সেবক হয়ে এবং মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করে নিজেকে নীচু করলেন। এছাড়া, চেহারায় মানুষ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত, এমনকি, ক্রুশের ওপর মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য থেকে তিনি নিজেকে আরও নীচু করলেন।
প্রভু ঈসা মসীহ একজন সেবাকারী শিশু হিসাবে

   ক) শারীরিক সমস্যাগুলো ভাগ করে নিলেন। যেমন-

    – তিনি দৈহিক আবরণ ধারণ করলেন
    – তিনি ক্ষুধিত ও পিপাসিত হয়েছিলেন
    – দৈহিক ব্যথা পেয়েছিলেন
    – এত কিছুর পরও তিনি কখনও পাপ করেননি!

খ) তিনি বেহেস্তী পিতার ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।

গ) তিনি আমাদের জন্য উদাহরণ হলেন যেন আমরা তাঁকে অনুসরণ করি। যেমন-
   -বাধ্যতায়
   -ধৈর্যে
   -অন্যের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে

৪. খোদার-সন্তান হলেন, তিনি মুক্তিদাতা শিশু ছিলেন

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ২৭ : ৫৪ আয়াত-সেনাপতি ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈসাকে পাহারা দিচ্ছিল তারা ভূমিকম্প ও অন্য সব ঘটনা দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে বলল, “সত্যিই উনি খোদার পুত্র ছিলেন।”
ইউহোন্না ৩ : ১৬ আয়াত-খোদা মানুষকে এত ভালোবাসলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের ওপর বিশ্বাস  করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।
হযরত ঈসা মসীহ খোদার-সন্তান ছিলেন। কারণ-

   ক) তিনিই একমাত্র নিষ্পাপ মানুষ, যিনি অনন্তকাল জীবিত।

   খ) তিনিই একমাত্র কোরবানী, যা পাপ মোচন করতে পারেন।

   গ) তিনিই একমাত্র মুক্তিদাতা, যিনি আপনাকে বেহেস্তে নিয়ে যেতে পারেন। ইউহোন্না ১৪:৬ আয়াত।

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *