আমাদের অনন্য নাজাতদাতা - Our Unique Savior

-রেভাঃ আবদুল মাবুদ চৌধুরী

ফিলিপীয় ২: ৫ – ১১

ভূমিকা : পৃথিবীতে অনেক নবী জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁরা নানা ভাবে মানুষের হেদায়ত করেছেন। যেন মানুষ খোদার দিকে ফিরে। কিন্তু মানুষের অনন্তকালীন যে প্রয়োজন তা কিন্তু রয়েই গেলো। মানুষের যে অনন্তকালীন প্রয়োজন তা হলো যেন মানুষ খোদার সাথে বেহেস্তে থাকতে পারে। মানুষের সেই প্রয়োজন মিটানোর জন্য হযরত ঈসা মসীহ অনন্তকালীন কাজ সম্পাদন করেছেন। সেই কারণেই তিনি অন্যদের থেকে অনন্য।

পৃথিবীতে যারা এখনও বেঁচে আছে এবং আগামীতেও বেঁচে থাকবে তাদের জন্য হযরত ঈসা মসীহ যা যা করেছেন তা নিয়েই আমরা এখানে আলোচনা করবো।

১ .হযরত ঈসার আগমন ছিল অনন্য (৫-৮ আয়াত)

ক) তিনি অত্যন্ত নম্রতায় জগতে এসেছিলেন : হযরত পৌল এখানে সুন্দরভাবে বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। হযরত ঈসা মসীহ যে শুধু একজন মানুষ ছিলেন তা নয়।

তিনি বিশেষ কোন উপাধি নিয়ে পৃথিবীতে আসেন নি। তিনি নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃস্ব করেই এসেছিলেন। পৃথিবীতে আসার সময় তিনি তাঁর খোদায়ী রূপ রেখে এসেছিলেন। সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যেই বিরাজ করেছেন।

২. তিনি গোলামের রূপ ধারণ করেছিলেন –  তিনি সাধারণ গোলামের মতই তাঁর সময় অতিবাহিত করেছিলেন (ইশাইয় ৫৩:৩)। যারা তাঁর এবাদত করবে, সেবা করবে এবং ভালবাসবে তারাই তাঁকে গ্রহণ করলেন না (ইউহোন্না ১:১১)।

৩. তিনি একজন মানুষের মতই ছিলেন। সৃষ্টির আরম্ভে খোদা তাঁর মত করে মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন (পয়দায়েশ ১:২৬)। খোদা নিজেকে মানুষের আকৃতিতে তৈরী করেছেন, যখন হযরত ঈসা বেথেলহেমে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। 

৪. তিনি একজন মানুষের সমস্ত কিছু ধারণ করেছিলেন – ঈসা একজন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহন করেন, তিনি মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করেন, তিনি মানুষ হিসেবে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন এবং মানুষ হিসেবে মৃত্যুবরণও করেন।

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি একজন পরিপূর্ণ মাংসিক মানুষ ছিলেন। তিনি ব্যথা পেয়েছেন, দারিদ্রতার মধ্যে ছিলেন, দুঃখিত হতেন, একাকিত্ব ছিলেন এবং তাঁকে অপমানিতও করা হয়েছিল।

তিনি হাসতেন, তাঁর আশা ছিল এবং তিনি বন্ধুত্বও করেছিলেন। যদিও তিনি মানব জীবনের প্রতিটি ধাপ অতিক্রম করেছিলেন, তথাপি তিনি কোন পাপ করেন নি।

তিনি স্বাধীন ও স্বেচ্ছায় এই পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং নিজেকে মানব জাতির একজন হিসেবে প্রকাশ করেছেন যেন তিনি আমার ও আপনার মতো নিজেকে বুঝতে পারেন।

৬ আয়াত : তিনি খোদার সমান হিসেবে নিজেকে মনে করেন নি। তিনি স্বইচ্ছায় আমাদের জন্য নিজেকে পরাজিত করেছিলেন। তিনি তা করেছিলেন যেন তিনি আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করতে পারেন, আমাদের অবস্থা বুঝতে পারেন এবং আমাদের সাহায্য করতে পারেন (ইব্রাণী ৪ : ১৫-১৬)

খ) তাঁর আগমন ছিল অত্যন্ত পবিত্র – ৬ আয়াতে বলা হয়েছে তিনি খোদার স্বরূপ (মত) ছিলেন। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই পৃথিবীতে ঈসা আসার আগে তিনি খোদা ছিলেন। আর তার মানুষ হিসেবে আগমনের কারণে তাঁর খোদায়ীত্ব থেকে থাকে নি। তাই তিনি ১০০% মানুষ ছিলেন এবং সাথে সাথে ১০০% খোদাও ছিলেন। তিনি শুধু তাঁর বেহেস্তী রূপ পরিবর্তন করে জগতের রূপ ধারণ করেছিলেন। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই মথি ১৭:১-৫ আয়াতে।

ঈসা যখন বেথেলহেমে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি পবিত্র হিসেবেই এসেছিলেন। খোদা আক্ষরিক অর্থেই পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং মানুষের মাঝে বসবাস করেছিলেন (ইউহোন্না ১: ১, ১৪)। আর তার ফল হলো একজন পরিপূর্ণ মানুষ সম্পূর্ণ পাপহীন ভাবে এসেছিলেন (১ পিতর ২ : ২২; ২ করিন্থীয় ৫:২১ ও ইব্রাণী ৪ :১৫)।
এই পৃথিবীতে তাঁর মতো আর কেউ নেই। প্রথম আদমের পাপ বহন করার জন্য শেষ মানব হিসেবে তিনি জন্মেছিলেন (রোমীয় ৫:১২; ৩:১০-২৩ আয়াত)। হযরত আদমের পাপ থেকে মুক্ত করতে হযরত ঈসার পৃথিবীতে আগমন কারণ তাঁর কোন জাগতিক পিতা ছিল না। তিনি একাই জন্মগত ভাবে পবিত্র ছিলেন।

তিনি যা করেছেন তাঁর মতো আর কেউ পৃথিবীতে তা করতে আসেন নি।

১.তাঁর দুঃখ-কষ্ট গ্রহণে তিনি অনন্য – ৮ আয়াত
ক) তাঁর দুঃখ-কষ্ট বেদনাদায়ক – আমরা বলি হযরত ঈসা হলেন খোদা ও মানুষ, যিনি স্বইচ্ছায় নিজেকে মৃত্যুর কাছে সপেঁ দিয়েছিলেন। ‘জীবনের কর্তা’ (প্রেরিত ৩ :১৫) আমার আপনার জন্য নিজেকে মৃত্যুযন্ত্রণায় প্রবেশ করালেন। তিনি যিনি ‘পুনরুত্থান এবং জীবন’ (ইউহোন্না ১১:২৫) তিনি নিজেকে নম্র করলেন এবং নিজের জীবনে অসহ্য যন্ত্রণাময় মৃত্যুকে গ্রহণ করলেন যেন আমরা তাঁর জীবন থেকে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি।
তিনি যে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তা কোন সাধারণ মৃত্যু ছিল না। কিতাব এই কথা বলে, তা ছিল ক্রশীয় মৃত্যু। এই পৃথিবীতে এরকম মৃত্যু আর কারো হবার ইতিহাস নেই (ইশাইয় ৫৩:৪-৬, ১০)।

খ) তাঁর দুঃখ-কষ্টের ক্ষমতা – তাঁর মৃত্যু সমস্ত মানবজাতির মুক্তির জন্য যথেষ্ট ছিল (১ পিতর ১ : ১৮-১৯)। তিনি ক্রশে মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমে খোদার অশেষ ভালবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন (রোমীয় ৫ : ৮)। হযরত ঈসা মসীহের ক্রুশে মৃত্যু যারা পাপ থেকে মুক্ত হতে চায় তাদের জন্য খোদার কাছে যাবার পথ খুলে দেয়া হয়েছিল (ইফিষীয় ২:১১-২২)।

গ) তাঁর দুঃখ-কষ্টের মূল্য – হযরত ঈসা শুধু পৃথিবীতে বসবাস করার জন্য মানুষ হিসেবে আসেন নি। তিনি মৃত্যু থেকে পুনরায় জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি এখনও আমাদের জন্য দুঃখ-কষ্ট ভোগ করছেন। তিনি যদিও এখন বেহেস্তে আছেন, কিন্তু তিনি মানবজাতির জন্য তাঁর সেই কষ্টের ক্ষত চিহ্ন বহন করে চলেছেন। প্রকাশিত কালাম ৫ : ৬ এবং ইউহোন্না ২০ : ২৪ – ২৮ আয়াত।

২. তাঁর প্রশংসায় তিনি অনন্য – ৯-১১ আয়াত

ক) তাঁর নামে তিনি প্রশংসিত – আমরা বলি তাঁকে এমন নাম দেয়া হয়েছে, যে নামটি সমস্ত নামের উপরে। সেই নামটি কি? ঈসা ! এই অসাধারণ নামের গুণে –

জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়;
অহংকার নম্রতায় পরিণত হয়;
অন্ধের চোখ খুলে যায়;
বধির কান শুনতে পায়;
পাপের বাধঁন দূর হয়ে যায়;
অন্ধকার দূর হয়ে আলো আসে;
বন্ধীরা বিজয়ের আনন্দ পায়;
আশাহীনদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়;
মৃতব্যক্তি জীবন পায়;
হারানো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায়;
শয়তান পালিয়ে যায়;
পাপীরা ভগ্নচুর্ণ হয়;
ধার্মিকেরা উল্লসিত হয়;
ফেরেস্তারা অবনত হয়।

 

এই নামের গুণে ও ক্ষমতায় আরো অনেক অলৌকিক কাজ হয়। এই নামের মধ্যে সত্যি আশ্চর্য কিছু লুকিয়ে আছে!
এই নামের সমাদর ও সম্মান বেহেস্তেও প্রকাশিত হচ্ছে (প্রকাশিত কালাম ৪-৫ অধ্যায়)।
এই নাম যা আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে, আমার চোখ খুলে দিয়েছে এবং আমার আত্মাকে পাপ থেকে মুক্ত করেছে। এই নামের অসাধারণ ক্ষমতা। দুনিয়াতে এমন আর কোন নাম নেই যে নামে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায় (প্রেরিত ৪ :১২)। একবার এই নামটি নিয়ে চিন্তা করুন।

৩. তাঁর দাবীর জন্য তিনি প্রশংসিত – খোদা হযরত ঈসাকে “প্রভু” বলে ঘোষণা করেছেন।  (প্রেরিত ১০:৩৬)

যদি তিনি আমাদের প্রভু হোন, তাহলে তিনি আমাদের ভালবাসা, সেবা, এবাদত এবং বাধ্যতা পাওয়ার যোগ্য।

যদি তিনি আমাদের প্রভু হোন, তাহলে তিনি আমাদের সময়, মেধা এবং সম্পদ পাবার যোগ্য।

যদি তিনি আমাদের প্রভু হোন, তাহলে তিনি আমাদের হৃদয়ে এবং জীবনে প্রথম স্থান পাবার অধিকার রাখেন।

যদি তিনি আমাদের প্রভু হোন, তাহলে তিনি অবশ্যই গৌরব, প্রশংসা এবং ভালবাসার যোগ্য।

যদি তিনি আমাদের প্রভু হোন, তাহলে তাঁকে সকলের প্রভু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবার দায়িত্বও আমাদের।

অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এটি ঠিক তিনি আমার মুক্তিদাতা, কিন্তু আমার জীবনে তাঁকে প্রভু বলে গ্রহণ করিনি।

তিনি ইতিমধ্যে প্রভু আছেন, তাই আপনার তাঁকে প্রভু বানাতে হবে না। আপনি তাঁকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ না করে শুধু মুক্তিদাতা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন না।  কিতাব এই কথা বলে, “তুমি ও তোমার পরিবার প্রভু ঈসা মসীহেতে বিশ্বাস কর, তাতে নাজাত পাবে” (প্রেরিত ১৬:৩১)।

আপনি গ্রহণ করেন বা না করেন তিনিই প্রভু। আমাদের জীবনে সবচেয়ে উত্তম হলো তাঁকে ভালবাসা, সম্মান দেয়া এবং তাঁর এবাদত করা যা তিনি পাবার অধিকার রাখেন। আপনি কি তাঁকে তা দিতে প্রস্তুত? একদিন আমাদেরকে তাঁর সামনে অবনত হতে হবে (প্রকাশিত কালাম ২২ :১১-১৫)। আসুন এখনই পাপের ক্ষমা পাবার জন্য তাঁর সামনে অবনত হয়ে তাঁকে গ্রহণ করি।

আপনি কি তাঁকে জানেন? তিনি আপনার জন্য এই পৃথিবীতে যা করেছেন তার জন্য তাঁকে ভালবাসা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন? তিনি এক অনন্য মুক্তিদাতা। আসুন এটিই সত্য জেনে তাঁকে সম্মান জানাই ও হৃদয়ে গ্রহণ করি।

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *